একটি জীবকোষ এতই ছোট যে তা খালি চোখে দেখা যায় না। তাই বলে মানুষ কিন্তু বসে নেই। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এই কোষ বেশ ভালোভাবে দেখা যায়। বর্তমানে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে কোষের সূক্ষ্ম অংশগুলোও ভালো দেখা যাচ্ছে। এর ফলে কোষে অনেকগুলো অঙ্গাণু আবিষ্কৃত হয়েছে। এবার কোষের প্রধান প্রধান অংশগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।
ক) কোষপ্রাচীর: শুধু উদ্ভিদ কোষে কোষপ্রাচীর দেখা যায়। প্রাণী কোষে কোনো কোষপ্রাচীর নেই। এটি জড় পদার্থের তৈরি। কোনো কোনো কোষের প্রাচীরে ছিদ্র থাকে। এদের কূপ বলে। কোষপ্রাচীর কোষের আকার প্রদান করে এবং ভেতর ও বাইরের মধ্যে তরল পদার্থ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এরা ভিতরের অংশকে রক্ষা করে।
খ) প্রোটোপ্লাজম: কোষপ্রাচীরের অভ্যন্তরে পাতলা পর্দাবেষ্টিত জেলীর ন্যায় থকথকে আধা তরল বস্তুটিকে প্রোটোপ্লাজম বলে। একে জীবনের ভিত্তি বলা হয়। এর তিনটি অংশ, যথা- কোষঝিল্লি, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস।

১। কোষঝিল্লি: সম্পূর্ণ প্রোটোপ্লাজমকে ঘিরে যে নরম পর্দা দেখা যায় তাকে কোষঝিল্লি বা সেল মেমব্রেন বলে। এটি কোষের ভেতর ও বাইরের মধ্যে পানি, খনিজ পদার্থ ও গ্যাস এর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।
২। সাইটোপ্লাজম: প্রোটোপ্লাজম থেকে নিউক্লিয়াসকে বাদ দিলে যে অর্ধতরল অংশটি থাকে, তাকে সাইটোপ্লাজম বলে। এর প্রধান কাজ কোষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঙ্গাণুগুলোকে ধারণ করা। কিছু শারীরবৃত্তীয় কাজ এখানে সম্পন্ন হয়, যেমন- সালোকসংশ্লেষণ। সাইটোপ্লাজমে দেখা যায়, এমন কয়েকটি ক্ষুদ্রাঙ্গের পরিচিতি নিম্নে দেওয়া হলো:
(ক) প্লাস্টিড: এগুলোকে বর্ণাধারও বলে। সাধারণত প্রাণী কোষে প্লাস্টিড থাকে না। প্লাস্টিড উদ্ভিদ কোষের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাতা, ফুল বা ফলের যে বিচিত্র রং আমরা দেখি তা সবই এই প্লাস্টিডের কারণে। সবুজ প্লাস্টিড প্রধানত খাদ্য তৈরিতে সাহায্য করে। অন্যান্য রঙের প্লাস্টিডগুলো উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গকে রঙিন করে আকর্ষণীয় করে তোলে। বর্ণহীন প্লাস্টিড খাদ্য সঞ্চয় করে।
| কাজ: মাটি দিয়ে কোষের একটি মডেল বানাও, যাতে কোষপ্রাচীর, কোষঝিল্লি, প্লাস্টিড ও নিউক্লিয়াস থাকবে। |
খ) কোষগহ্বর: পিয়াজের কোষ পরীক্ষা করে দেখ। দেখবে যে কোষের মধ্যে বৃহৎ একটি ফাঁকা জায়গা রয়েছে। এটাকে কোষগহ্বর বলে। নতুন কোষের গহ্বর ক্ষুদ্র বা অনুপস্থিত থাকতে পারে কিন্তু একটি পরিণত উদ্ভিদ কোষে এ গহ্বরটি বেশ বড়। উদ্ভিদ কোষে অবশ্যই গহ্বর থাকবে। একটি প্রাণী কোষে সাধারণত কোষগহ্বর থাকে না, তবে যদি থাকে তাহলে সেটি হবে ছোট। কোষগহ্বরে যে রস থাকে, তাকে কোষরস বলে। কোষগহ্বর উদ্ভিদ কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
কোষগহ্বর কোষরসের আধার হিসেবে কাজ করে। ইহা ছাড়া কোষের উপর কোন চাপ এলে তাও নিয়ন্ত্রণ করে।
গ) মাইটোকন্ড্রিয়া: একে কোষের শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র বলা হয়। কারণ এই অঙ্গাণুর অভ্যন্তরে শক্তি উৎপাদনের প্রায় সকল বিক্রিয়া ঘটে থাকে। এরা দন্ডাকার, বৃত্তাকার বা তারকাকার হতে পারে। এরা দুই স্তর বিশিষ্ট ঝিল্লি দিয়ে আবৃত্ত থাকে। বাইরের স্তর মসৃণ কিন্তু ভিতরের স্তরটি ভাঁজযুক্ত। মাইটোকন্ড্রিয়ার প্রধান কাজ শ্বসন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে শক্তি উৎপাদন করা। তাই মাইটোকন্ড্রিয়াকে শক্তির আধার বলে।
Read more